আজকের এই চলমান সীমিত সময়ের মাঝে আমি আলোচনা করব নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে যার শিরোনাম
একজন নিরাপত্তা কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো কি কি?
নিরাপত্তা বিভাগ যে কোন প্রতিষ্ঠনের জন্য একটি অত্যন্ত গূরূত্বপূর্ণ বিভাগ। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাক্তি, বস্তু, তথ্য সহ সামগ্রীক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল ভূমিকা পালন করে নিরাপত্তা বিভাগ। একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিভাগ যদি দূর্বল হয় তাহলে তার প্রভাব প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়।
এখানে একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি,
মনে করুন একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা ভালো, উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মান ভালো, আবার উৎপাদিত পন্যে বিক্রয়ের জন্য বাজার চাহিদা এবং পণ্যের মূল্যও ভালো মানের কিন্তু প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হওয়ার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। পরবর্তীতে সবকিছু বিশ্লেষণ করে দেখা গেল প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি মিলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে (চালান/ গেটপাশ ছাড়া) উৎপাদিত পন্য প্রতিষ্ঠানের বাহিরে পাচার করেছেন। অনুপস্থিত লোকের বেতন শীট তৈরি করে নিজেরা উত্তোলন করেছেন। মেশিন মেরামতের নামে ও যন্ত্রাংশ ক্রয় করার নানে বিপুল অংকের অর্থের অনিয়ম করেছেন। প্রতিষ্ঠানে এত নিয়ম বহির্ভূত কাজ হওয়া সত্বেও নিরাপত্তা বিভাগ কোন প্রকার তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ঠ শক্তিশালী নয় এবং নিরাপত্তা কর্মীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষিত নয়।
উপরোক্ত উদাহরনের আলোকে সুষ্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে একটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিভাগ যদি দূর্বল হয় তাহলে তার প্রভাব প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। কারণ উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি শক্তিশালী হতো তাহলে কোন ক্রমেই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে (সঠিক চালান/ গেটপাশ ছাড়া) প্রতিষ্ঠান থেকে কোন পন্য বের হতো না। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রবেশ/বাহির লিপিবদ্ধ করে রাখলে অনুপস্থিত ব্যাক্তির বেতন তৈরী করতে পারতো না। আবার বাহির থেকে আগত মালামালের পরিমাণ চালান/গেটপাশের সাথে সঠিক ভাবে যাচাই পূর্বক লিপিবদ্ধ করে রাখলে কোন মালামাল প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ না করিয়ে অথবা পরিমানে কম বেশি করে বিল উত্তোলন করা সম্ভব হতো না।
সুতরাং একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা বিভাগ কতটা জরূরী তা আমরা উপোরোল্লিখিত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম। কিন্তু অত্যন্ত্য দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই নিরাপত্তা বিভাগকে পর্যাপ্ত পরিমান গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না আবার কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হলে সর্বপ্রথম জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় নিরাপত্তা কর্মীদের। তাই যারা প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য সমন্ধে জানা থাকা বিশেষ জরুরী সেই সাথে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থপনা কর্তৃপক্ষের উচিৎ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত সকল সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একজন নিরাপত্তা কর্মীর মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো কি কি তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো যা বাংলাদেশের প্রচলিত শ্রম আইন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিরাপত্তা পলিসি (C-TPAT, WRAP, GSV) অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
১ সকল নিরাপত্তা কর্মী নিয়মিত প্রশিক্ষন গ্রহন করবে।
২ প্রত্যেক নিরাপত্তা রক্ষীর পূর্ণাঙ্গ পার্সোনাল ফাইল মানব সম্পদ বিভাগে থাকতে হবে।
৩ কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত নিজস্ব ফটো আইডি বেজ প্রদর্শিত অবস্থায় রাখতে হবে।
৪ রোস্টার ডিউটি মেইনটেইন করতে হবে এবং রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৫ বাহির থেকে আগত ব্যক্তি / দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও কারখানার অভ্যন্তরে চলাফেরা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
৬ প্রত্যেক গাড়ীর প্রবেশাধীকার নিয়ন্ত্রন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৭ কারখানায় আসা যাওয়া মালামালের প্রবেশ / বাহির নিয়ন্ত্রন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৮ কারখানায় আসা যাওয়া মেইন/পার্শ্বেল প্রবেশ/বাহির নিয়ন্ত্রন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯ ভিজিটর রেজিষ্টার মেইনটেইন করতে হবে।
১০ ভেহিকল রেজিষ্টার মেইনটেইন করতে হবে।
১১ মেইন/পার্শ্বেল রেজিষ্টার মেইনটেইন করতে হবে।
১২ নিয়মিত ও সার্বক্ষনিক প্রহরার মাধ্যমে কারখানার চর্তুপার্শ্বে সীমার প্রাচীরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩ কারখানা খোলা ও বন্ধের সময় দরজা/জানালা/গেট প্রভৃতি চেক করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করবে।
১৪ কারখানার অভ্যন্তর শ্রমিক/কর্মচারীদের প্রবেশ নিরাপত্তা ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
১৫ কারখানায় প্রবেশ কালে সকল শ্রমিক/কর্মচারী/ দর্শনার্থী ও অন্যান্য সরবরাহকারীদের আইডি বেজ আছে কিনা তাহা নিশ্চিত করবে।
১৬ আইডি বেজ ছাড়া কাহাকে ও ঢুকতে দেয়া যাবে না।
১৭ বাহিরের আগত দর্শনার্থীরা আসলে প্রশাসনিক অফিসারের নিকট অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করাতে হবে।
১৮ প্রয়োজনে পাহারা দিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দিতে হবে।
১৯ প্রয়োজনে দর্শনার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে হবে।
২০ কারখানায় মালামাল লোড এবং আনলোডিং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২১ প্যাকিং সেকশান / এরিয়ার প্রবশাধীকার নিয়ন্ত্রন, নিরাপত্তা করতে হবে।
২২ ফিনিশড গুদামের প্রবেশাধীকার নিয়ন্ত্রন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২৩ কারখানার অভ্যন্তরিন সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২৪ জরুরী টেলিফোন নিরাপত্তা পোস্টে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।
২৫ নিয়োগের জন্য আসা সকল শ্রমিকের চলাফেরা নিয়ন্ত্রন করবে।
২৬ দূর্ঘটনা, চুরি, ক্ষতিসাধান, অনুনমোদিত ব্যক্তির সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ, নাশকতামূলক কার্যক্রম প্রভৃতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২৭ কারখানা এলাকায় অনুনমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ/চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করবে।
২৮ পাহারাকালীন সময়ে কাহাকে ও সন্দেহ হলে বা অস্বাভাবিক আচরণ করলে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
২৯ কারখানায় প্রবেশের সময় কোন জিনিসের প্রতি সন্দেহ হলে চেক করতে হবে।
৩০ চাকুরীচ্যুত/বরখাস্তকৃত/স্বেচ্ছায় চাকুরী হইতে অব্যাহতি প্রাপ্ত শ্রমিক/কর্মচারীদের কর্ম এলাকায় দেখলে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।
৩১ চাকুরীচ্যুত/বরখাস্তকৃত/স্বেচ্ছায় চাকুরী হইতে অব্যাহতি প্রাপ্ত শ্রমিকের তালিকা সংগ্রহে রাখতে হবে।
৩২ কারখানা এলাকায় কোন কারণ ছাড়াই একাধিক লোক দেখলে/নাশকতামূলক কাজ দেখলে/ঝগড়া বা কলহ সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে দেখলে তাহাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রশাসনিক অফিসারকে অবহিত করতে হবে।
৩৩ কারখানার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সব কর্মকান্ড দেখা মাত্র নিয়ন্ত্রন এবং প্রয়োজনে প্রশাসনিক অফিসারকে অবহিত করবে।
৩৪ তালা চাবি নিয়ন্ত্রন করবে এবং নিরাপত্তা বিধান করবে।
৩৫ ফটোসহ আইডি বেজ প্রদর্শিত অবস্থায় থাকতে হবে।
৩৬ সার্বক্ষনিক চোখ কান খোলা রেখে কারখানার নিরাপত্তা, মালামালের নিরাপত্তা এবং সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৩৭ প্রত্যেক দর্শনার্থীর / কণ্ট্রাক্টর লেবার / নিজস্ব লেবার প্রভৃতির আভ্যন্তরীন চলাফেরা করবে।
৩৮ কোন অনুনোমোদিত ব্যক্তিকে দেখামাত্রই সংশ্লিষ্ট বিভাগ অর্থ্যৎ প্রশাসনিক অফিসারকে অবহিত করবে।
৩৯ যে কোন ঘটনা/দূর্ঘটনা হলে নিয়ন্ত্রন করবে এবং প্রশাসনিক অফিসারকে অবহিত করবে।
৪০ সংরক্ষিত এলাকা সমূহ যেমন প্যাকিং এরিয়া/লোডিং-আনলোডিং এরিয়া/ফিনিশিড গুডস এরিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৪১ কাজের সহিত সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোন দ্রব্য / পেকেট সন্দেহ হলে চ্যালেঞ্জ করবে।
৪২ কাহকে সন্দেহ হলে / অস্বাভাবিক আচরন করলে / ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হলে তাহা নিয়ন্ত্রন করবে।
৪৩ নিরাপত্তা রক্ষী নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক প্রহরার মাধ্যমে কারখানার চুর্তপার্শ্বের নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা ও মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৪৪ রপ্তানীযোগ্য মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৪৫ প্রশাসনিক অফিসারের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করবে।
৪৬ শ্রমিক/কর্মচারীদের আসা যাওয়া/আভ্যন্তরীন চলাফেরা/ ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস প্রভৃতি নিয়ন্ত্রন পূর্বক নিরপত্তা বিধান করবে।
৪৮ কারখানার নিরাপত্তা /মালামালের নিরাপত্তা/শ্রমিক কর্মচারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন সব কর্মকান্ড দেখা মাত্রই নিয়ন্ত্রন করবে প্রয়োজনে প্রশাসনিক অফিসারকে অবহিত করবে।
৪৯ বিলম্বে উপস্থিতি রেকর্ড করতে হবে।
৫০ ডিউটি চলাকালীন সময়ে গেটপাশ/অনুমতি ব্যাতিত যেন কেও বাহিরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
Thanks for reading my post.
ReplyDelete